শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
আবু জাফর, কেরানীগঞ্জ থেকে:: ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে ১ম ধাপে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ভোট গ্রহন হবে ৮ মে। নির্বাচনে ২ জন চেয়ারম্যান, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই উপজেলায় যারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের ‘লোক’। চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি টানা ৩ বার কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখায় দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন ‘দেশসেরা উপজেলা চেয়ারম্যান’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেছেন সেরা হওয়ার সনদ ও সম্মাননা।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আলতাফ হোসেন বিপ্লবের রয়েছে রাজনৈতিক ইতিহাস। বর্তমানে তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অনেকের মতো তিনিও সেদিন বোমার আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন। তার পায়ে ২০ টির বেশি স্পিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল। যেগুলোর বেশিরভাগ এখনো শরীর থেকে বের করা যায়নি। কেরানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুল হক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলো বেগম পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বললেও শেষমেষ নির্বাচন থেকে দুজনই সরে দাঁড়ান। ফলে এই দুই পদে নতুন মুখ আসবে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন। তার প্রতীক তালা। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে ‘জোট’ বেধে নির্বাচন করছেন।
এছাড়াও রয়েছেন শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন (মাইক প্রতীক)। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদের সঙ্গে জোট বেধে নির্বাচন করছেন। এই পদে আরও নির্বাচন করছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদ ইকবাল (টিউবওয়েল)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি আসমা আক্তার (কলস)। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদের প্যানেলে জোট বেঁধেছেন। এই পদে আরও প্রার্থী হয়েছেন মডেল থানা যুব মহিলালীগের সহ-সভাপতি শান্তি আক্তার (সেলাই মেশিন)।
উম্মুক্ত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। নির্বাচন ঘিরে দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দুই এমপি দুটি প্যানেলকে আলাদা আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব বলেন, কেরানীগঞ্জের মানুষ পরিবর্তনের অপেক্ষায়। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বলেছেন কেরানীগঞ্জের নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখবেন। সিল মেরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জে তিন বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এমন কোন এলাকা নেই উন্নয়ন করা হয়নি। আমি আশা করি কেরানীগঞ্জের জনগন আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো: সুমন মিয়া বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্যে আমরা সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার্স ইনচার্জ মামুনুর রশীদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪ হাজার ৯২৯ জন। পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৭৪ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৫টি। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রার্থীদের মাঝে এ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।
ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। নির্বাচনের আচারণ বিধি সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী তার নিজ এলাকায় রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করতে পারবেন। প্রচার-প্রচারণায় সংযোগের কাজ করতে হলে সাথে ৫ জনের বেশি নেওয়া যাবে না। নির্বাচনী প্রার্থীরা প্রতি ওয়ার্ডে প্রতি ইউনিয়নের একটি করে নির্বাচনী অফিস ব্যবহার করতে পারবেন। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে আগামী ৬ মে রাত ১২টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক প্রার্থী তার প্রচার-প্রচারণা সম্পন্ন করতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।